Saturday, January 26, 2019

গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স রোগ, লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন ২)

যেসব প্রাণীর এ রোগ হয়: মূলত গরু এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, মহিষ, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, শূকর, হাতি এবং বানরও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রাণী থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় বলে একে জ্যুনোটিক ডিজিজও (zoonotic disease) বলে। তাই ভয়ের কারণ একটু বেশি।
কিভাবে ছড়ায় : মৃত বা আক্রান্ত পশুর লালা বা রক্তের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তা ছাড়া চুল, উল বা অন্যান্য বর্জের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। মৃত পশু পচে গলে মাটিতে মিশে গেলেও হাড় যদি থাকে তবে তা থেকেও ছড়াতে পারে। এ রোগের জীবাণু প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশেও বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে। কখনো এক দশকও। কোথাও একবার এ রোগ দেখা দিলে তা পরবর্তী সময়ে আবারো দেখা দিতে পারে। ট্যানারি বর্জ্যরে সঠিক ও সুষ্ঠু নিষ্কাশন এ জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অ্যানথ্রাক্সে মৃত গরুর চামড়া ট্যানারিতে গেলে তা থেকে জীবাণু চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভয়াবহ অবস্খার সৃষ্টি হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়।
রোগটি কেন এত মারাত্মক : এ রোগের জন্য দায়ী ব্যাসিলাস অ্যাথ্রাসিস (Bacillus anthracis) নামের এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া। এই ব্যাক্টেরিয়া বিশেষ ধরনের কিছু টক্সিন বা বিষাণু তৈরি করতে পারে। এ টক্সিন প্রাণীদেহে প্রবেশের দুই থেকে চার ঘন্টার মধ্যে প্রাণীদেহের নিউট্রোফিলকে দুর্বল করে ফেলে। নিউট্রোফিল হচ্ছে এক ধরনের শ্বেতকণিকা যা বাইরের জীবাণুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। টক্সিন নিউট্রোফিলের ফিলামেন্ট তৈরিতে বাধা দেয়, ফলে নিউট্রোফিল চলৎ-শক্তি হারিয়ে ফেলে। সংক্রমণের স্খানে যেতে পারে না, ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংসও করতে পারে না। নিউট্রোফিল নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ব্যাক্টেরিয়া বাধাহীনভাবে দ্রুত দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগ তৈরি করে মৃত্যু ঘটায়।
রোগের লক্ষণ : লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই সাধারণত গরু মারা যায়। তবে লক্ষণ হিসেবে কখনো কখনো গরুর খিঁচুনি, কাঁপুনি দেখা দেয়। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। তাপমাত্রা প্রায় ১০৫-১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। গরু ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গরু মারা যায়। মারা গেলে নাক, মুখ, কান, মলদ্বার দিয়ে কালচে লাল রঙের রক্ত বের হয়। এ রোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গরু মারা যাওয়ার পরও রক্ত কখনো জমাট বাঁধে না।
লক্ষণসমূহ:
ক. অত্যাধিক জ্বর হয় (১০৩-১০৭ ফাঃ);
খ. শ্বাসকষ্ট এবং দাঁত কটকট করে;
গ. শরীরের লোম খাড়া হয়ে উঠে;
ঘ. আক্রান্ত পশু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে;
ঙ. পশুকে কিছুটা উত্তেজিত দেখায়;
চ. পশু নিস্তেজ হয়ে শুয়ে পড়ে;
ছ. খিঁচুনি হয় ও অবশেষে পশু মারা যায়;
জ. মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বা পরে পশুর নাক, মুখ, মলদ্বার ইত্যাদি দিয়ে কালো রক্ত নির্গত হয়;
ঝ. অনেক সময় লক্ষণসমূহ প্রকাশের আগেই পশুর মৃত্যু ঘটে।
রোগ নির্ণয় : রোগের লক্ষণ দেখে সহজেই রোগ নির্ণয় করা যায়। তাছাড়া রক্ত পরীক্ষা করলে ছোট দণ্ডের মতো ব্যাক্টেরিয়া দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগে মৃত গরুর ময়নাতদন্ত করা হয় না। তবে ভুলক্রমে ময়নাতদন্ত করে ফেললে দেখা যায় প্লীহা বড় হয়ে গেছে।
চিকিৎসা : সাধারণত চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ পাওয়া যায় না, তার আগেই আক্রান্ত গরু মারা যায়। যদি কখনো আক্রান্ত গরু পাওয়া যায় তবে উচ্চমাত্রার পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। ভ্যাকসিন দেয়াই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। লাইভ এবং কিলড উভয় ধরনের ভ্যাকসিনই পাওয়া যায়। চামড়ার নিচে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই গরুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আক্রান্ত গরুতে আগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে নতুন করে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হয় না।

No comments:

Post a Comment

কোয়েল পালন সম্পর্কিতপ্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ  কোয়েল কত দিনে ডিম দেয় ? উত্তরঃ  কোয়েল পাখি সাধারনত ৪৫ দিন বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু করে । তবে বাস্তবে প্রায় ৫৫ - ৬০ দিন সময় লেগে ...